সাকিবুর রহমান:
কক্সবাজারের ফুটবলার মো.জুয়েল। অনূর্ধ-১৯ ফুটবল দলের জেলা অধিনায়ক। ২০১১ সাল থেকে জেলা দলের নিয়মিত খেয়োলাড় ছিলেন জুয়েল। অল্পদিনের মধ্যে পেয়ে যান জেলা অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব। খেলার মাঠে তার নৈপুণ্যে মুগ্ধ ক্রীড়াপ্রেমীরা। স্বপ্ন ছিল জাতীয় ফুটবল দলে খেলার। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হল না। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিভে গেছে মেধাবী এই খেলোয়াড়ের জীবন। থেমে গেছে সংসারের চাকা।

জুয়েলের বড় ভাই মো: সোহেল জানান, কক্সবাজার সদরের বাংলা বাজার ছমুদা ব্রিজের পাশে এ বছরের ৩০মে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন জুয়েল। তার আয়ে চলত সংসার চলত। এখন দেখা দিয়েছে অচল অবস্থা। বাসা ভাড়া দেয়ার সামর্থও নেই।

জুয়েলের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জুয়েল ছিল আদরের মানিক। তাকে বলেছিলাম বিদেশ চলে যেতে। সে বলেছিল, পাঁচ বছরের মধ্যে ফুটবলে সে সফলতা পাবে। তখন আর কোনো চিন্তা থাকবে না। কিছুই হলোনা। আমার আগেই সে পাড়ি জমালো ওপারে।’

কক্সবাজার পৌর এলাকার নুনিয়াছড়ায় জুয়েলের জন্ম। তার পিতা নুরুল হক। ২০১৬ সালে বাবা মারা যান। তিন ভাই ও বৃদ্ধ মা কে নিয়ে শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সংসারে অভাব সবসময় তাদের তাড়িয়ে বেড়াত। তার ভাই সাগর সৈকতে ফটোগ্রাফারের কাজ করে সংসার চালাতেন। জুয়েলও একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ফুটবলের নেশায় সে চাকরও ছেড়ে দেন।

জুয়েলের পরিবার জানায়, ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি তার নেশা। বল দেখলেই নেমে পড়তেন। খেলতে গিয়ে নানা বাধা। কিন্তু কোন কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। তার খেলা নজরে আসে ক্রীড়া সংগঠকদের। স্টেডিয়ামে অনুশীলনের জন্য ডাকা হয়। সেই থেকে শুরু সফলতার গল্প।জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফএ) জানায়, ২০১১ সাল থেকে জেলা দলের নিয়মিত খেয়োলাড় ছিলেন জুয়েল। অল্পদিনের মধ্যে পেয়ে যান জেলা অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব।

গত যুব গেমস ফুটবলে তার নেতৃত্বে দল অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করে। কক্সবাজারে অন্য টুর্ণামেন্টেও তার ছিলো সরব পদচারণা। মৃত্যু পাল্টে দিয়েছে সব হিসাব। তাকে হারানোর বেদনা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনকে।

কক্সবাজারের কৃতি ফুটবলার সাজ্জাদ ইকবাল রোহান ও মো: জিসান স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, কক্সবাজার ফুটবলে জুয়েলের বিচরণ ছিল লক্ষনীয়। মাঠেজুড়ে তার দাপুটে খেলা সবাইকে মুগ্ধ করত। তার মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গন হারালো মেধাবী এক খেলোয়াড়কে।

কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি অনুপ বড়ুয়া অপু বলেন, জুয়েরের মধ্যে অপার সম্ভাবনা ছিল। সব শেষ হয়ে গেছে। তবে তার পরিবারের সমস্যায় জেলা ক্রীড়া সংস্থা সবসময় পাশে থাকবে।